telescopesmall bg

    BLOGS

      cover-image

      হাবল: আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতীক

      Planetary Science

      হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, বর্তমান সময়ের প্রযুক্তির অন্যতম এক বিস্ময় যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে মহাবিশ্বের চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন সব ছবি দিয়ে মুগ্ধ করেছে। এটি গ্রহ নক্ষত্র ও ছায়াপথের অজানা সব তথ্য প্রকাশ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, যা আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে যেভাবে আমরা পূর্বে কখনও কল্পনাও করিনি। কিন্তু ২৫ বছর ধরে সফলভাবে সেবা দান আর ১০,০০০ বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্র এবং অর্ধ মিলিয়ন ছবির প্রকাশের পরে নাসা এই অসাধারণ সফল মিশনটি ইতি টানার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

      আমাদের সৌর জগতের গ্রহগুলোর অত্যাশ্চর্য সব ছবি গ্রহণের পাশাপাশি হাবল টেলিস্কোপ পর্যবেক্ষণ করছে মিল্কিওয়ে ও এর বাইরের গভীর মহাকাশ। ছবি তুলেছে পৃথিবী থেকে কয়েক মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্র গঠনকারী নেবুলার ও নক্ষত্রের, যেগুলো সূর্যের তুলনায় একশত গুণ বড় ও মিলিয়ন গুণ উজ্বল। বিজ্ঞানীরা এই টেলিস্কোপের সাহায্যে ছায়াপথের সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক কিছু বলের অস্তিত্ব লক্ষ করেন। আরও পর্যবেক্ষণ করেন নক্ষত্রের জীবনের শেষ মুহূর্তে অত্যধিক পরিমাণ শক্তির নির্গমন। এখন পর্যন্ত হাবল দিয়ে যতগুলো ছবি তোলা হয়েছে তার মধ্যে বৈজ্ঞানিকভাবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল হাবল ডিপ ফিল্ড (HDF) ইমেজ যা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সবথেকে প্রত্যন্ত ও প্রাচীন গ্যালাক্সিগুলোর সন্ধান দেয়।

      ভূমিকা: আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতীক হাবল স্পেস টেলিস্কোপ— প্রযুক্তির এক বিস্ময় যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে মুগ্ধ করেছে মহাবিশ্বের দৃষ্টিনন্দন সব ছবি ও উদ্দীপনা জাগানো আবিষ্কার দিয়ে। আড়াই দশকের সেবায় গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি সম্পর্কে এযাবৎ কালের সর্বাধিক অজানা সব তথ্য প্রকাশ করে এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

      গ্রহান্তরের বিস্ময়: আমরা সবে যাত্রা শুরু করছি সৌরজগতের বিশ্বে— আমাদের একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ, অতীতে অগম্য বুধ, উত্তপ্ত শুক্র এবং দুর্বোধ্য মঙ্গলে। যাত্রা করছি গ্রহাণু বলয়ের মধ্য দিয়ে বাইরের গ্রহের দেশে এবং সবশেষে সৌরজগতের নিস্তব্ধ গভীরতায়। এই বিশ্বে সহজে অনুসন্ধানীয় মহাজাগতিক বস্তুগুলোর দূরত্বের পরিসীমা, চাঁদের জন্য ৪০০,০০০ কিলোমিটার (২৫০,০০০ মাইল), সৌরজগতের বাইরের দিকের দানব আকৃতির গ্রহ ও কাইপার বলয়ের জন্য যা কিনা কয়েক বিলিয়ন কিলোমিটার। ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭২ সাল অবধি এক ডজনের মত নভোচারী চন্দ্রপৃষ্ঠে হেঁটেছেন চাঁদের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস জানার জন্য এবং চন্দ্রশিলা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন অধিকতর গবেষণার জন্য, যখন কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত মহাকাশযানগুলো ভ্রমণ করছে সৌরজগতের প্রধান প্রধান গ্রহগুলোতে এবং কিছু সংখ্যক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন প্রান্তে। 

      এই মহাকাশযানগুলো আমাদের চিন্তার গভীরতাকে ও দৃষ্টির পরিধিকে প্রসারিত করেছে নিকটবর্তী মহাশূন্যে, যেখানে হাবলের দৃষ্টি পৌঁছাতে অক্ষম (উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের খুব কাছের গ্রহ বুধ যা হাবলের নমনীয় দৃষ্টির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর)। তা যাইহোক, এই ধরনের যান্ত্রিক অনুসন্ধানকারীরা অবশ্যম্ভাবীরূপে পরিচালিত হয় খুবই ক্ষুদ্র সময়ের জন্য— আন্তগ্রাহিক মহাশূন্যের অতল সমুদ্রের ভিতর দিয়ে হাবলের দৃষ্টি শক্তি সম্ভবত অতোটা বিশদ নয় কিন্তু অতি দ্রুত সাড়া দিতে পারে অযাচিত সব ঘটনায় এবং বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে আমাদের পার্শ্ববর্তী মহাজাগতিক বস্তুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষক হিসেবে।

      তারাদের খোঁজে: সৌরজগতে সফলতার পাশাপাশি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের বিখ্যাত সব আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে অনেক দূরের নক্ষত্রের রাজ্যে, যা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি গঠন করেছে, এবং গ্যালাক্সির মধ্যকার ধুলা-বালির মেঘ বা নীহারিকার দেশে। 

      এমনকি পৃথিবীর সবথেকে কাছের নক্ষত্রটিও এই সৌরজগতের অন্যযেকোনো কিছুর তুলনায় কল্পনাতীত দূরে। সবথেকে কাছের, মৃদু লোহিত বামন যা নামে পরিচিত, এতটাই দূরে, যে এর আলো প্রতি সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার (১৮৬,০০০ মাইল) বেগে ধেয়ে আমাদের টেলিস্কোপে আসতে প্রায় ৪.২ বছর সময় লাগে (পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে যে আট মিনিট লাগে তার সাথে তুলনা করে দেখুন)। অন্যভাবে চিন্তা করলে, প্রক্সিমা সেন্টারি ৪০ মিলিয়ন মিলিয়ন কিলোমিটার— এখন পর্যন্ত আমাদের সৌরজগতে খুঁজে পাওয়া সবথেকে দূরের বস্তু সেনা (Sedna) থেকে প্রায় ৩০০০ গুণ দূরে অবস্থিত। 

      আমাদের গ্যালাক্সির প্রায় সব নক্ষত্রই প্রক্সিমা সেন্টারি থেকে দশ, শত শত কিংবা কয়েক হাজার গুণ দূরে। তাই এটা কিঞ্চিত অবাক করার বিষয় যে পৃথিবী থেকে সবথেকে বড় নক্ষত্রটিও এতটাই ক্ষুদ্র হিসেবে প্রতীয়মান হয় যে একে ডিস্কে ধারণ করা অসম্ভব। সৌভাগ্যবশত, টেলিস্কোপ দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে আলোর ক্ষীণ রশ্মিকে প্রশস্ত করে নক্ষত্রের অজানা তথ্য জানা যায়। এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (HST) বহুদূরবর্তী অত্যন্ত ক্ষুদ্র ধূলিকণার ন্যায় আলোক বিন্দুকে তাদের নিজস্ব সত্ত্বা— সূর্যের ন্যায় রূপান্তর করে এই ধরনের পদ্ধতিতে ভিন্ন মাত্রা এনেছে।



      পদ্ধতির ঘনঘটা: প্রচলিত পদ্ধতিরগুলোর মধ্যে সবথেকে গ্রহণযোগ্য হল বর্ণালীবীক্ষণ (Spectroscopy)। নক্ষত্র বিচ্ছুরিত আলোকে রামধনুর ন্যায় বিভিন্ন রঙে (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য) বিন্যস্ত করার সাথে জড়িত— একটি যন্ত্রকে বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র (Spectroscope) বলে। সব নক্ষত্রের আলোই ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোর মিশ্রণে গঠিত যা সামগ্রিকভাবে একটিমাত্র রঙের আভাস দেয়। উনবিংশ শতাব্দী থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন রঙের সুনির্দিষ্ট মিশ্রণ ও তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তীব্রতা নক্ষত্রের উপরিপৃষ্ঠের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে— লাল নক্ষত্র গুলো অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা, কমলা ও হলুদ গুলো উষ্ণতর, সাদা গুলোও উষ্ণতর এবং নীল নক্ষত্রগুলো সবচেয়ে উত্তপ্ত। 

      এছাড়াও নক্ষত্র থেকে যে আলো নির্গত হয় তার অন্যতম কারণ, নক্ষত্রের উপরিভাগের অণু ও আধানের শক্তির নির্গমন। প্রত্যেক রাসায়নিক উপাদানই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য উৎপন্ন করে। ধন্যবাদ! এর অভ্যন্তরীণ গঠনকে। যার ফলে, সাধারণ বর্ণালীতে সচরাচর আঁকাবাঁকা অন্ধকার শোষণ বর্ণালী রেখা (absorption line) দেখা যায়। যেখানে বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলো নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের শক্তি শোষণ করে নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে গমন করে। এই বর্নালী রেখাগুলো নক্ষত্রের রাসায়নিক গঠনের বিস্ময়কর রহস্যের বিবরণ দিতে সক্ষম। এবং যখন নক্ষত্রের বিবর্তনের তাত্ত্বিক মডেলের সাথে এই উপাত্ত মিলানো হয় তখন নক্ষত্রের বয়স ও বিবর্তনের ধাপ সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করে। অপরদিকে, নীহারিকা উত্তেজিত হতে পাড়ে তাপীয় ভাবে অথবা পার্শ্ববর্তী নক্ষত্রের আলোয়। যার ফলে, তারা নির্গমন করে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ও বর্ণের বিকিরণ যা নীহারিকার বর্ণালীতে বিকিরণ বর্ণালী রেখা (emission line) হিসেবে চিহ্নিত।

      নক্ষত্র ও অন্যান্য বস্তুর গতি পরিমাপ করা বর্ণালীবীক্ষণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার। আমাদের সাপেক্ষে নক্ষত্রের অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য বর্ণালীতে নীল অথবা লাল বর্ণের দিকে নক্ষত্রের আলো স্থানান্তরিত হওয়ার ধর্ম বিদ্যমান যা কিনা ডপলার ইফেক্ট (Doppler Effect) নামে পরিচিত। ডপলার ইফেক্টের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে— উদাহরণস্বরূপ, একে অন্যের চারদিকে ঘূর্ণনরত একাধিক নক্ষত্র সিস্টেমের আপেক্ষিক ভর ও আকার হিসাব করতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

      বহু দূরবর্তী নক্ষত্রদের নিয়ে পড়াশুনার ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রোমেট্রি নামক আরেকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় (আকাশে নক্ষত্রের অবস্থানের সবথেকে সূক্ষ্ম পরিমাপ)। আকাশের দ্রুত গতিসম্পন্ন নক্ষত্রের সঠিক বেগ পরিমাপ করতে পারে এই পদ্ধতি। এমনকি সূর্যের চারপাশে ৩০০ মিলিয়ন কিলোমিটার প্রশস্ত পৃথিবীর কক্ষপথের দুই প্রান্ত থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে দৃশ্যমান নিকটবর্তী নক্ষত্রের সামান্যতম আপাত অবস্থানের (Parallax) পরিবর্তনও এটি পরিমাপ করতে পারে।

      এদিকে মহাজাগতিক বস্তুর উজ্জ্বলতার সূক্ষ্ম পরিবর্তন পরিমাপ করা হয় ফটোমেট্রি (Photometry) নামক পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতি দিয়ে যেসকল নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার নিয়মিত বা অনিয়মিত পরিবর্তন ঘটে (Variable Stars) তাদের মিটিমিটি স্পন্দনের বৈশিষ্ট্য উদঘাটন করা যায়।

      ফটোগ্রাফিক ইমেজিং নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য উদঘাটনে বিফল হলেও নক্ষত্র নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এর একটা বড় অবদান রয়েই যায়। মহাশূন্যে আলোক বর্ষ জুরে প্রসারিত এবং অনেক অনেক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নীহারিকা— যা দিয়ে নক্ষত্র গঠিত হয়, সেগুলো এবং এই নক্ষত্রগুলো জীবনচক্রের শেষ পর্যায়ে যে পরিণতি ধারণ করে, উভয়ই মিলিয়ন, এমনকি বিলিয়ন বছর স্থায়ী হয়। নক্ষত্রের জীবন চক্রের এই সব পর্যায়ের রহস্য উদঘাটন একমাত্র হাবলের মত দীর্ঘ এক্সপোজারের টেলিস্কোপের পক্ষেই সম্ভব। সবমিলিয়ে, ২০ বছরে নক্ষত্রের জন্মের রহস্য ও মৃত্যু সম্পর্কে নতুন তথ্য উন্মোচন, দূরবর্তী সৌরজগৎ এবং সম্পূর্ণ নতুন প্রকার নক্ষত্রের রহস্যভেদ করে হাবল বিশাল প্রভাব ফেলেছে নক্ষত্র সম্পর্কে আমাদের অর্জিত জ্ঞানে।

      গ্যালাক্সির রাজ্যে: প্রায় ১৫০,০০০ থেকে ২০০,০০০ আলোক-বর্ষব্যাপী বিস্তৃত আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বহু নক্ষত্র বিশিষ্ট একটি সিস্টেম। যাকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান আছে দশ কিংবা একশ হাজার আলোক-বর্ষ দূরের স্যাটেলাইট সিস্টেম। গোটা মহাবিশ্বই গ্যালাক্সিতে পরিপূর্ণ যা আবার বহু মিলিয়ন আলোক-বর্ষ ব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এই সকল গ্যালাক্সিদের রহস্য উন্মোচের জন্য হাবল প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঐ দিগন্তে।

      বহুদূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আগত আলো আসলে গ্যালাক্সির ভিন্ন ভিন্ন অংশের কয়েক বিলিয়ন স্বতন্ত্র নক্ষত্র, হাজার হাজার দ্যুতিমান নীহারিকা, মাঝে মধ্যে কেন্দ্রের সক্রিয় গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত ডিস্ক আকৃতির উজ্জ্বল বস্তু থেকে আগত আলোর মিলিত রূপ। হাবল সাধারণত এই সব গ্যালাক্সির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য কাছাকাছি অন্য সব বস্তুর মত একই পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ করে। বর্ণালীবীক্ষণের (Spectroscopy) সাহায্যে তাদের মধ্যকার পদার্থের ভৌত ধর্ম এবং ফটোমেট্রি (Photometry) দিয়ে নিউক্লিয়াসের উজ্জ্বলতার তারতম্য পর্যবেক্ষণ করে। যেহেতু মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের জন্য গ্যালাক্সিগুলোতে মোটামুটি সাধারণ প্রবাহ লক্ষ করা যায় তাই বিশেষত অতিদূরবর্তী গ্যালাক্সির জন্য ডপলার ইফেক্ট (Doppler Effect) খুবই কার্যকারী। মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও ইতিহাস বোঝার জন্য সম্প্রসারণ (Expansion) অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ।

      এদিকে গ্যালাক্সির গঠন সম্পর্কে দুর্বোধ্য সব বিবরণের রহস্যভেদ করতে সরাসরি চিত্রগ্রহণ (Direct Imaging) পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কয়েক বিলিয়ন আলোক-বর্ষ দূরের গ্যালাক্সি থেকে আগত আলো সনাক্ত করতে পারে অনেক লম্বা “ডিপ ফিল্ড (Deep Field)” এক্সপোজার। ধন্যবাদ সময়কে- যা অতিবাহিত হয়েছে এই গ্যালাক্সিগুলো থেকে আলো আমাদের কাছে আসতে, ফলে আমরা দেখতে পাই গ্যালাক্সির ইতিহাসে তাদের যে প্রাথমিক অবস্থা ছিল তা, যা আমাদের গ্যালাক্সির বিবর্তনের দুর্বোধ্য গল্প পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে।

      হাবলের পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃষ্টি একে দিয়েছে বহুদূরবর্তী গ্যালাক্সির আলাদা আলাদা নক্ষত্রের রহস্য উদঘাটনের অসাধারণ ক্ষমতা। নিকটবর্তী মহাশূন্যের তুলনায় যেসকল নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার নিয়মিত পরিবর্তন ঘটে (Cepheid Variables), সেই সকল নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই মহাবিশ্বের আকার ও বয়সের ধারণা করতে পারেন, যখন অনেক অনেক দূরের বিস্ফোরিত নক্ষত্র— যা টাইপ ১এ সুপারনোভা নামে পরিচিত, মহাবিশ্বের অন্যতম রহস্যজনক ডার্ক এনার্জির রহস্যভেদ করতে সাহায্য করেছে।

      হাবল স্পেস টেলিস্কোপ আমাদেরকে মহাশূন্যের সবথেকে কাছের প্রতিবেশী, চাঁদ থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের সবথেকে দূরবর্তী অংশ সম্পর্কে নতুন করে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।

      Comments

      2023-11-05

      cover-image

      কৃষ্ণবিবর উপাখ্যান

      Astronomy

      কৃষ্ণবিবর সম্পর্কে আপনার যা কিছু জানা প্রয়োজন!

      ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ

      ১৭৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে জন মিশেলের ইঙ্গিত দেওয়ার পর থেকেই কৃষ্ণবিবর-এর আলোচনা ব্যাপকভাবে বৈজ্ঞানিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের মধ্য দিয়ে এই বস্তুগুলো সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক প্রস্তাবটি এসেছে। ১৬৮৭ সালে আইজ্যাক নিউটন বিবৃতি দিয়েছিলেন যে মহাকর্ষ বল এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুর মধ্যে কাজ করে। তবে তিনি নিজে কখনও এই বস্তুটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে মহাকর্ষের সম্পূর্ণ নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন।

      তার মতে, সকল প্রকাণ্ড বস্তু স্থান-কালে বক্রতা তৈরি করে যা পরবর্তীতে মহাকর্ষ হিসেবে অনুভূত হয়। এটা বুঝাচ্ছে যে, মহাকর্ষ স্থান-কালের বক্রতা ছাড়া আর কিছুই না। জিমন্যাশিয়ামে শারীরিক ব্যয়ামের জন্য যে ট্র্যামপোলিন কাপড় ব্যবহার করা হয় এটায় যদি কেউ লাফ দেয় তবে এটা যেমন বক্রতা তৈরি করে ঠিক তেমনি প্রকাণ্ড বস্তুগুলোও স্থান-কালের চতুর্মাত্রিক চাদরকে বিকৃত করে দেয়। বস্তু যত বেশি ভারী হবে বিকৃতিও তত বেশি হবে।




      এখন পর্যন্ত এটাকে সকল সময়ের সবচেয়ে সুন্দর ও যৌক্তিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই তত্ত্বে আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন যে, যখনই কোনো বৃহৎ ও ভারী তারকা মরে যায়, তখন এর অবশিষ্ট ছোট অংশটি অন্তঃসার অর্থাৎ কোর হিসেবে থেকে যায়। আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকুয়েশনর সম্ভাব্য সমাধানগুলো থেকে কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে কোরটির ভর যদি সূর্যের ভর থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি হয় তবে মহাকর্ষের বল অন্য সমস্ত শক্তিকে উপেক্ষা করে একটি কৃষ্ণবিবর তৈরি করে।

      কৃষ্ণবিবর সম্পর্কে প্রাথমিক পারিভাষিক শব্দাবলী

      এখন কৃষ্ণবিবর সম্পর্কে কিছু মৌলিক পারিভাষিক শব্দাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা যাক




      ঘটনা দিগন্ত (Event Horizon)

      ঘটনা দিগন্ত হলো কৃষ্ণবিবরের এমন এক অঞ্চল যেখান থেকে কোন কিছুই এমনকি আলোও বের হয়ে আসতে পারে না। এই অঞ্চলে কোন পতিত বস্তুর প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও বাইরের কোন ভিন্ন প্রসঙ্গ কাঠামো থেকে কোন পর্যবেক্ষকের কাছে এই ব্যাপারটা ভিন্ন মনে হতে পারে। এটি মূলত মহাকর্ষীয় সময় সংকোচনের কারণে ঘটে। মহাকর্ষীয় বলের টান বাড়ার সাথে সাথে পদার্থগুলো থেকে বিকিরিত আলোর রেড শিফট হতে থাকে এবং ভেতরে পড়ন্ত পদার্থ যতই ঘটনা দিগন্তের কাছাকাছি পৌঁছতে থাকে, অধিক রেড শিফটের কারনে পদার্থগুলো অদৃশ্য হওয়া শুরু করে। সুতরাং কৃষ্ণবিববের ঘটনা দিগন্তের গঠন সম্পর্কে একজন বহিঃস্থ পর্যবেক্ষক কখনোই ধারণা করতে পারে না।

      অনন্যতা বিন্দু বা সিংগুলারিটি (Singularity)

      সাধারণ আপেক্ষিকতা অনুযায়ী, কৃষ্ণবিবরের কেন্দ্রে থাকে মহাকর্ষীয় অনন্যতা বিন্দু (Singularity)। এই অনন্যতা বিন্দুটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে স্থান-কালের বক্রতা অসীম হয়ে যায়। ধারনা করা হয় এই অনন্যতা বিন্দুর আয়তন শূন্য এবং এর রয়েছে অসীম ঘনত্ব। এই অনন্যতা বিন্দু এমন এক জায়গা যেখানে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব কাজ করে না।

      ফোটনের গোলক (Photon Sphere)

      একটি ফোটন গোলক বা ফোটন বৃত্ত এমন একটি অঞ্চল যেখানে মহাকর্ষ এত শক্তিশালী যে, ফোটনগুলো এর কক্ষপথে ঘুরতে বাধ্য হয়। কৃষ্ণবিবরের চারপাশে এটি একটি শূন্য পুরুত্বের গোলাকার সীমানা যেখানে এই গোলকের স্পর্শের কাছাকাছি যে ফোটনগুলো থাকবে সেগুলো এর বৃত্তীয় কক্ষপথে আটকে পড়বে। অ-ঘূর্ণনশীল কৃষ্ণবিবরের জন্য, ফোটনের গোলকের ব্যাসার্ধ হয় শোয়ার্জশাইল্ড ব্যাসার্ধের ১.৫ গুন। অন্যদিকে ঘূর্ণনশীল কৃষ্ণবিবর এ দুটি ফোটন গোলক থাকে : একটি কৃষ্ণবিবরের ঘূর্ণনের দিকে আর অন্যটি বিপরীত দিকে ঘুরে।




      এর্গোস্ফিয়ার (Ergosphere) :

      ঘূর্ণনরত কৃষ্ণবিবরগুলো চারদিকে এমন এক স্থান-কাল অঞ্চল দিয়ে বেষ্টিত থাকে যেখানে স্থির থাকা অসম্ভব। স্থান-কালের এই অঞ্চলকে বলা হয় এরগোস্পিয়ার (Ergosphere)। এর্গোস্ফিয়ার থেকে বস্তু ও বিকিরণ মুক্ত হয়ে যেতে পারে। পেনরোজ প্রক্রিয়ার (Penrose Process) মাধ্যমে বস্তুগুলি এর্গোস্ফিয়ারে যত শক্তি নিয়ে প্রবেশ করে তার থেকেও বেশি শক্তি নিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। বের হওয়ার সময় এ শক্তি পায় কৃষ্ণবিবরের আবর্তন শক্তি থেকে এবং যার ফলে পরবর্তীতে ঘূর্ণনশীল কৃষ্ণবিববের ঘূর্ণন ধীর হয়ে যায়।

      অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীল বৃত্তাকার কক্ষপথ (Innermost Stable Circular Orbit) :

      নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ অনুসারে, একটি কেন্দ্রীয় বস্তু থেকে পরীক্ষণীয় বস্তুগুলো কিছু ইচ্ছামূলক (arbitrary) দূরত্ব বজায় রেখে স্থিতিশীলভাবে প্রদক্ষিণ করতে পারে। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে এমন একটি অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীল বৃত্তাকার কক্ষপথ (ISCO) পাওয়া যায়, যার অভ্যন্তরে কোনো বৃত্তাকার কক্ষপথের অতিক্ষুদ্র মাত্রার বিচ্যুতিও কৃষ্ণবিবরে আলোড়ন জাগিয়ে তুলে।

      কৃষ্ণবিবরের ধরন :

      মূলত, কৃষ্ণবিবরগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। তা হল :

      • মাইক্রো কৃষ্ণবিবর
      • স্টেলার মাস কৃষ্ণবিবর
      • সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণবিবর

      এখন একে একে এগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক

      • মাইক্রো কৃষ্ণবিবর

      এটিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল কৃষ্ণবিবরও বলা হয় এবং এধরনের কৃষ্ণবিবরগুলো হাইপোথেটিকাল। তারার ভরের চেয়েও যে কম ভরের কৃষ্ণবিবর গঠিত হতে পারে, এটি ১৯৭১ সালের স্টিফেন হকিং-এর তত্ত্ব থেকে প্রথম ধারনা পাওয়া যায়। এই মাইক্রো কৃষ্ণবিবরগুলোর একটি নির্দিষ্ট ভর সীমা আছে। শোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ এবং কম্পটন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ধারণা অনুসারে, একটি মাইক্রো ব্ল্যাকহোলের সর্বনিম্ন ভর ২২ মাইক্রো-গ্রাম, যা প্লাঙ্ক ভর হিসাবেও পরিচিত।

      মহাবিশ্বে কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল ব্ল্যাকহোলগুলোর অতীব শক্তি ও ঘনত্ব শুরুর মহাবিশ্বে জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই জাতীয় ব্ল্যাকহোলগুলি অস্থায়ী ছিল এবং হকিং বিকিরণের মাধ্যমে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ১৯৭৫ সালে হকিং দেখিয়েছিলেন যে কোয়ান্টাম মেকানিকাল প্রভাবের কারণে ব্ল্যাকহোলটি আরও ছোট এবং দ্রুত বিলীন হবে। মাইক্রো ব্ল্যাকহোলটি হঠাৎ বিস্ফোরিত হওয়ার ফলে হঠাৎ কণাগুলো ফেটে যায়। গানিতিকভাবে বলা হয় এই মাইক্রো ব্ল্যাকহোলগুলো তৈরি করতে প্রয়োজনীয় শক্তি লাগে ১০১৯ গিগা ইলেকট্রোভোল্ট (GeV)। বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমে সর্বোচ্চ যতটা শক্তি অর্জন করতে পারি এই শক্তি তার চেয়ে অনেক বেশি।

      • স্টেলার মাস কৃষ্ণবিবর

      কৃষ্ণবিবরের শ্রেণিবিন্যাসে দ্বিতীয়টি হল স্টেলার মাস কৃষ্ণবিবর। এগুলো সর্বাধিক আলোচিত কৃষ্ণবিবর যা মাইক্রোগুলো থেকে ভিন্ন আর এগুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান। এদের গঠনের প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের জানা। নাম থেকে বোঝা যায়, একটি বিশাল তারকা মারা যাওয়ার পরে একটি স্টেলার মাস কৃষ্ণবিবর তৈরি হয়। বিশাল তারকাগুলোর কোরে ঐ রকম ভারী উপাদান থাকে যা পূর্ণ মাত্রায় ফিউশন ঘটাতে পারে।ক্রমান্বয়ে তারকাগুলো কেন্দ্রে কার্বন, নিয়ন, অক্সিজেন, সিলিকন, সালফার ইত্যাদি উপাদানের ফিউশন ঘটে।










      এই আঘাতকারী আলফাকণাগুলো যখন নিকেল-৫৬ এ পৌঁছায় তখন অভ্যন্তরস্থ শৃঙ্খল বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নিকেল (Nickel) দস্তাতে (Zinc) পরিণত হওয়ার যে ফিউশন সেটি তাপীয়ভাবে অনুকূল নয়। এমনকি এর ফলে কোরটি একেবারে নিঃশেষিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় তারকাগুলোর নিজস্ব মহাকর্ষের প্রভাবেতারকাগুলো ধবংস হয়ে যায়। তারকাটি যদি অনেক বিশাল হয় তবে কোন কিছুই এর ধবংস হয়ে যাওয়া থেকে থামাতে পারে না আর তারকাটি কৃষ্ণবিবরে পরিণত হয়।

      সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণবিবর

      এই সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণবিবর হল এমন এক ধরনের বৃহত্তম কৃষ্ণবিবর যা গ্যালাক্সির (Galaxy) কেন্দ্রে পাওয়া যায়। এগুলো সূর্যের মত প্রকাণ্ড এমনকি সূর্য থেকে এক বিলিয়ন গুণ ভারীও হতে পারে। তবে এই কৃষ্ণবিবরের ঘনত্ব পানির ঘনত্বের থেকে কম হতে পারে। এর কারণটি সহজ: কৃষ্ণবিবরের শোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ এর ভরের সাথে সরাসরি আনুপাতিক এবং আয়তন, ব্যাসার্ধের ঘনকের সাথে সমানুপাতিক। তাহলে যা দাঁড়ায়, এর ঘনত্ব, ভরের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক হয়। অতএব, ভর যত বেশি ঘনত্ব তত কম হবে।




      এছাড়াও, এই কৃষ্ণবিবরগুলোর টাইডাল ফোর্স(দুই বিন্দুর মহাকর্ষ শক্তির পার্থক্য) খুব কম। ঘটনা দিগন্তের একটি বস্তুতে টাইডাল ফোর্স উক্ত বস্তুর ভরের বর্গক্ষেত্রের সমানুপাতিক। পৃথিবীর পৃষ্ঠের থাকা একজন ব্যক্তি এবং অন্যদিকে ১০ মিলিয়ন সৌরভরের কৃষ্ণবিবরের ঘটনা দিগন্তের কাছাকাছি থাকা ব্যক্তি উভয়ই সারা শরীরে একই টাইডাল বল অনুভব করবে।

      এ জাতীয় রহস্যময় বস্তুু যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জন্ম হয় তা এখনও রহস্য এবং জ্যোতিঃপদাথর্বিজ্ঞানের গবেষণার এক উন্মুক্ত ক্ষেত্র। এ নিয়ে বিভিন্ন হাইপোথিসিসও আছে। একটি হাইপোথিসিসটি হল এমন : বৃহৎ তারকাগুলোর বিস্ফোরণের ফলে এমন দশ সৌরভরের কিংবা ১০০ সৌরভরের কৃষ্ণবিবরগুলো তৈরি হয়েছে এবংআর পদার্থ বাড়ার সাথে সাথে এদের দ্বারা এ কৃষ্ণবিবরগুলোরও বৃদ্ধি হয়। কিছু বিজ্ঞানী আরও অনুমান করেছেন যে এ জাতীয় সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণবিবরগুলো তৈরি হয়েছেওয়ার পথ হয়ত মহাবিশ্বের প্রথম তারকা মৃত্যুর পর। অবশ্য সঠিক ব্যাখ্যা আসেনি।

      কৃষ্ণবিবর শনাক্তকরণ :

      যেহেতু কৃষ্ণবিবরগুলো কল্পনীয় হকিং রেডিয়েশন ব্যতীত অন্য কোন তড়িৎচুম্বক বিকিরণ নির্গত করে না, তাই এদের সরাসরি শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এ কারণে কৃষ্ণবিবরের সন্ধানকারী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এ ব্যাপারে পরোক্ষ পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করতে হয়। এই পরোক্ষ পর্যবেক্ষণগুলি ইন্টারফেরোমিটার ব্যবহার করে মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলি শনাক্ত করে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া মহাকর্ষীয় লেন্সিং, কিছু অদৃশ্য শক্তির আশেপাশের বস্তুর রহস্যময় গতি বিশ্লেষণ, পদার্থের ত্বরণ ইত্যাদিও কৃষ্ণবিবর শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

      পরোক্ষ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ১৯৭২ সালে কৃষ্ণবিবরের প্রথম শক্তিশালী বস্তু, সিগনাস এক্স -১ (Cygnus X-1) আবিষ্কার করা হয়েছিল।

      কৃষ্ণবিবরের গবেষণায় অন্যতম বড় অগ্রগতি এসেছে ২০১৯ সালে।

      এপ্রিল ১০, ২০১৯-এ ২০০ জ্যোতির্বিদদের ২-বছরের বেশি কঠোর পরিশ্রমের পরে আমাদের প্রতিবেশী ছায়াপথের প্রথম সিমুলেটেড চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছিল সুপারকম্পিউটার ও ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের মাধ্যমে।




      আজ যদিও আমাদের কৃষ্ণবিববরে প্রথম ছবি আছে তারপরেও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এর সত্যতা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ বিদ্যমান ৷ কেউ কেউ এই প্রকাণ্ড বস্তু সম্পর্কে সম্মতি দেয়, আবার কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করে।

      সর্বোপরি এত এত বিতর্কের মাঝেও এখনকার সময়ে প্রধান আলোচনার মধ্যে কৃষ্ণবিবরের আলোচনা বিরাট অংশ দখল করে আছে।

      প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণবিবরের কী অস্তিত্ব আছে?

      সাধারণ আপেক্ষিকতার পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রথম থেকেই জ্যোতির্বিদরা প্রকৃত গাণিতিক ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করছেন। আইনস্টাইন, এডিংটন, ম্যাক ক্রিয়া, মিত্রের মতো বিজ্ঞানীরা প্রকৃত গাণিতিক কৃষ্ণবিবরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেন নি। অন্যদিকে হকিং, চন্দ্রশেখর, থর্নের মতো বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যরকম মতামত ছিল।

      সময়ের যাওয়ার সাথে সাথেতখন কৃষ্ণবিবরের স্বীকৃত মডেলটিতে অনেক ত্রুটি পাওয়া গিয়েছিল এবং অনেক বিকল্প মডেলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি গ্র্যাভাস্টার (gravesters), নগ্ন অদ্বৈততা (Naked Singularities) এবং মেকো (MECO) অন্তর্ভুক্ত।

      এই সমস্ত মডেলগুলির মধ্যে, মেকো (MECO) বেশ আশাব্যঞ্জক। মেকো হলো চিরতরে ম্যাগনেটোস্ফেরিক সঙ্কুচিত বস্তু এবং ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভাস মিত্র (Abhas Mitra) এটি প্রস্তাবিত করেছিলেন এবং পরে ড্যারিল জে লেইটার এবং স্ট্যানলি এল রবার্টসন জেনারালাইজ করেছিলেন। সত্যিকারের কৃষ্ণবিবর এবং মেকো-র মধ্যে অন্যতম প্রধান পার্থক্য হ’ল মেকো তাদের নিজস্ব চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে এবং এটি পর্যবেক্ষণ দ্বারা সমর্থিত একটি সত্য। এছাড়া বর্তমানে গৃহীত মডেল হিসাবে এটা বলা হয়েছে যে মেকো সিঙ্গুলারিটির মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায় না। মেকো চিরন্তন ধ্বংসাত্মক বস্তু হয়। এগলো কেবল সিংগুলারিটিকে অসীমে আঘাত করবে।

      মূল আর্টিকেল https://www.secretsofuniverse.in/black-holes-boa-18/


      অনুবাদক :

      রকিবুল হাসান

      Comments

      2023-11-05

      cover-image

      কোয়াসার : মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু

      Astronomy

      আভিধানিক সংজ্ঞা অনুসারে, কোয়াসার একটি ভারী ও অত্যন্ত দূরবর্তী মহাকাশীয় বস্তু যা প্রচুর পরিমাণে শক্তি বিকিরণ করে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে একটি কোয়াসার দেখতে নক্ষত্রের মতো হলেও এটি থেকে বিপুল পরিমাণে রেডিও তরঙ্গ বিকিরিত হয়।

      একারণে প্রথমদিকে কোয়াসি-স্টেলার রেডিও সোর্স নামকরণ করা হয়েছিল যা এখন সংক্ষেপে কোয়াসার নামে পরিচিত। কোয়াসারগুলো অনেক উজ্জ্বল হয়। কখনও কখনও এতই উজ্জ্বল হয় যে, এরা যে গ্যালাক্সিতে অবস্থান করে সে গ্যালাক্সিকেই এদের উজ্জ্বলতার কারণে দেখা যায় না। এই শক্তিশালী বস্তুগুলো আবিষ্কারের পর থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করে আসছে। আজকের প্রবন্ধের লক্ষ্য এদের সম্পর্কে অনুসন্ধান করা।

      কোয়াসারের আবিষ্কার

      রেডিও ও অপটিক্যাল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগের সবচেয়ে সফল ফলাফল ছিল কোয়াসারের আবিষ্কার। ১৯৩২ সালে আমেরিকান প্রকৌশলী কার্ল জানস্কি, সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা রেডিও তরঙ্গের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুজ্জ্বল মহাকাশীয় বস্তুগুলো থেকে রহস্যজনক রেডিও তরঙ্গ নির্গমনের কারণ খুঁজছিলেন।

      ফলস্বরূপ, ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে প্রথম কোয়সার আবিষ্কৃত হয়েছিল। আগে কোয়াসারকে শুধুমাত্র রেডিও তরঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হত (যার সাথে সম্পৃক্ত কোন দৃশ্যমান বস্তু পাওয়া যেত না) ১৯৬৩ সালে, দৃশ্যমান বস্তু হিসেবে 3C 48 নামক রেডিও তরঙ্গের উৎস শনাক্ত করা হয়েছিল। রহস্যময় এই বস্তুর নাম দেওয়া হয় কোয়াসার।




      কোয়াসারের গঠন এবং বৈশিষ্ট্য

      বিজ্ঞানীদের মতে এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রায় গ্রহণযোগ্য একটি তত্ত্ব হচ্ছে অধিকাংশ বড় বড় ছায়াপথগুলোতে একটি করে সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বর থাকে। তত্ত্বীয়ভাবে, কোয়াসার এবং অ্যাক্টিভ গ্যালাক্টিক নিউক্লিয়াইতে (AGN) কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে একটি গ্যাসীয় Accretion ডিস্ক ঘিরে থাকে। আসেপাশের গ্যাস যখন কৃষ্ণগহ্বরে পড়তে থাকে, শক্তি তখন তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ আকারে বিকিরিত হয়। যা আমরা সমগ্র তড়িৎচৌম্বকীয় বর্ণালী জুড়েই পর্যবেক্ষণ করতে পারি। কোয়াসারের বৈশিষ্ট্যসমূহ অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন কোয়াসার সম্পৃক্ত কৃষ্ণগহ্বরের ভর, কোয়াসারে গ্যাসের বৃদ্ধির হার, পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে অ্যাক্রিশন ডিস্কের অবস্থান, জেটের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি এবং ছায়াপথগুলোর মধ্যে গ্যাস-ধুলিকণার অস্পষ্টতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।




      শক্তিশালী অতিবেগুনী রশ্মি বিকিরণের কারণে কোয়াসার এবং সাধারন নক্ষত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে পার্থক্য করা যায়। সাধারনত মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্র কোয়াসারের মতো শক্তিশালী অতিবেগুনী রশ্মি বিকিরণ করে না। কোয়াসার সক্রিয় ছায়াপথের মতো একই রকমের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য প্রদর্শণ করে। এগুলো তড়িৎচৌম্বকীয় বর্ণালীর অনেক অংশে থাকে, যেমন বেতার, অবলোহিত, দৃশ্যমান, অতিবেগুনী, এক্স-রে এমনকি গামা রশ্মিতেও দৃশ্যমান।

      কোয়েসারের সকল ধরনের বর্ণালী পর্যবেক্ষণ/বিশ্লেষণ করে ০.০৬ থেকে সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ ৬.৪ পর্যন্ত রেড শিফট পাওয়া গিয়েছে। কোয়াসারের ক্ষেত্রে রেড শিফটের মান ৩ থেকে বেশি হলে এই তথ্য প্রকাশ করে যে, কোয়াসারগুলো উচ্চ গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে এবং খুবই দূরে অবস্থিত।


      কোয়াসারের উপপ্রকার

      কোয়াসারের বিভিন্ন উপপ্রকারগুলো হলো :

      বেতার সক্রিয় কোয়াসার (Radio-loud Quasars):

      এসকল কোয়াসারে শক্তিশালী জেট পাওয়া যায় যা রেডিও-তরঙ্গের শক্তিশালী উৎস। এদের পরিমান সকল কোয়াসারের প্রায় ১০%।

      বেতার নিষ্ক্রিয় কোয়াসার (Radio-quiet Quasars):

      এসকল কোয়াসারে শক্তিশালী রেডিও জেট নেই অর্থ্যাৎ এরা তুলনামূলকভাবে দূর্বল রেডিও জেট নির্গমন করে। অধিকাংশ কোয়াসারই (প্রায় ৯০%) হলো বেতার নিষ্ক্রিয় কোয়াসার।

      প্রশস্ত শোষণ-রেখা কোয়াসার (Broad absorption-line Quasars):

      এসকল কোয়াসারের ব্লু শিফট হওয়া বর্ণালীতে প্রশস্ত শোষণ-রেখা দেখা যায়। প্রায় ১০% কোয়াসারে প্রশস্ত শোষণ রেখাগুলো দৃশ্যমান হয়। প্রশস্ত শোষণ-রেখা সাধারণত বেতার নিষ্ক্রিয় কোয়াসারে দেখা যায়।

      Type II কোয়াসার :

      এই ধরণের কোয়াসারে ঘন গ্যাস এবং ধুলিকণা, কোয়াসারের অ্যাক্রিশন ডিস্ক ও প্রশস্ত বিকিরণ-রেখাকে অস্পষ্ট করে তুলে।

      রেডিস কোয়াসার (Red Quasars):

      এ কোয়াসারগুলো সাধারন কোয়াসারের তুলনায় রেডিস হয়ে থাকে। এগুলো সম্ভবত কোয়াসারের হোস্ট গ্যালাক্সির মধ্যে মাঝারি মাত্রার ধূলিকণা বিলুপ্তির ফলাফল। অবলোহিত ব্যান্ডের তথ্য অনুসারে, লোহিত কোয়াসারগুলো মোট কোয়াসারের উল্লেখযোগ্য অংশ।

      অপটিক্যালি ভায়োলেন্ট ভেরিয়েবল কোয়াসার (Optically Violent Variable (OVV) Quasars:):

      বেতার সক্রিয় কোয়াসার যার জেটটি পর্যবেক্ষকের দিকে থাকে, নির্গমন জেটের আপেক্ষিক দিকের কারণে এধরণের কোয়াসারের উজ্জ্বলতায় তীব্র ও দ্রুত পরিবর্তনশীলতা দেখা যায়।

      দুর্বল নির্গমন লাইন কোয়াসার (Weak emission line Quasars):

      অতিবেগুনী বা দৃশ্যমান বর্ণালীতে এ কোয়াসারগুলো থেকে অস্বাভাবিকভাবে মৃদু নির্গমন রেখা পাওয়া যায়।


      কোয়াসারের গুরুত্ব

      একটি কোয়াসার অত্যন্ত দূরবর্তী, উজ্জ্বল এবং দেখতে তুলনামূলক ছোট প্রতীয়মান হয়। তাই আকাশে একটি স্থানাঙ্ক সিস্টেম (Co-ordinate System) স্থাপনে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ বিন্দু হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, কোয়াসার ইন্টারন্যাশনাল সেলেস্টিয়াল রেফারেন্স সিস্টেমের (আইসিআরএস) অন্যতম মৌলিক ভিত্তি। বিজ্ঞানীরা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী, প্রায় ১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোয়াসার চিহ্নিত করেছিলেন। J1342+0928 নামের কোয়াসারটি বিগ-ব্যাংয়ের মাত্র ৬৯০ মিলিয়ন বছর পর আবির্ভূত হয়েছিল।

      এই প্রাচীন কোয়াসারগুলো সময়ের সাথে ছায়াপথের বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। আবার, কোয়াসার থেকে শক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পৌঁছাতে বিলিয়ন বছর লাগে। এই কারণে এদের জানার মাধ্যমে মহাবিশ্বের শুরুর দিকের তথ্য পেতে পারেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।




      অনুবাদক :

      অর্ণব সুত্রধর

      Comments

      2023-11-05

      cover-image

      জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ কী? কেন? কীভাবে?

      Observational Astronomy

      আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে মহাকাশের সবচেয়ে দূরের তারাগুলো পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছিল হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী জগতে হাবল স্পেস টেলিস্কোপেরও আয়ু ফুরিয়ে এলো বলে। তাই এর উত্তরসূরি হিসেবে এবার পৃথিবীর সাপেক্ষে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরের তারাগুলো আরো স্পষ্ট করে দেখতে আকাশপানে উড়াল দিবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।

      ১৯৯৬ সালে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ লঞ্চ হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারিগরি জটিলতার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। এই প্রজেক্টটির মূল দায়িত্বে আছে NASA। তবে নাসাকে নানা সহায়তা দিয়ে সাহায্য করছে ESA (European Space Agency) ও CSA (Canadian Space Agency)। নাসার দেওয়া সর্বশেষ ঘোষণা মতে এ বছরের ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ লঞ্চ হতে যাচ্ছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এটিকে রাখা হবে আমাদের পৃথিবী থেকে ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরের এল২ ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্টের কাছাকাছি। বলে রাখা ভালো, সূর্য-গ্রহ সিস্টেমে এমন ৫টি পয়েন্ট থাকা সম্ভব যেখানে ওই গ্রহ ও সূর্যের মহাকর্ষীয় প্রভাবের সাথে কক্ষীয় গতির সাম্যাবস্থা সৃষ্টি হয়। ফলে ওই পয়েন্টে রাখা কোনো বস্তুর অবস্থান সূর্য ও ওই গ্রহের সাপেক্ষে সবসময় একই থাকে। এল-২ ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট এমনই একটি পয়েন্ট।

      এল২-এর কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও ১০ বছর চলতে পারবে এইটুকু পরিমাণ জ্বালানি নিয়ে মহাকাশে যাচ্ছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। প্রথমদিকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ১৫ বছরের জন্য কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হলেও ইঞ্জিনিয়ারদের বুদ্ধি ও কৌশলের কারণে তা এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। একইভাবে ওয়েব-এর জীবনসীমাও বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কোনো কোনো ইঞ্জিনিয়ার।

      জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে আসলে অনেক কাজই করা সম্ভব হবে। তবে এর মূল কাজ তিনটি।

      ১. শিশু মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ: কোনো বস্তু থেকে আলো আসলে আমরা ওই বস্তুকে দেখতে পাই। বহুদূরের কোনো বস্তু থেকে আলো আসতে আসতে অনেক সময় লাগে। তাই যত দূরের বস্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমরা আসলে সেই বস্তুকে তার তত বেশি অতীতের অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে মূলত দূর মহাবিশ্বের এই বস্তুগুলোকে তাদের অতীতের অবস্থায়ই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা হলো, এই টেলিস্কোপটির সরঞ্জাম এতটা উন্নত ছিল না যে এর সাহায্যে খুব স্পষ্টভাবে বহু দূরের নক্ষত্রগুলো দেখা যাবে। অন্যদিকে আমাদের মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে অনেক দূরের নক্ষত্র থেকে আসা আলোরও রেড শিফট হচ্ছে। কোনো নক্ষত্র যত দূরে সেটি তত বেশি অবলোহিত অঞ্চলের আলো বিচ্ছুরণ করে। সেটিকে আর দৃশ্যমান অঞ্চলের আলো বিচ্ছুরণ করতে দেখা যায় না। কিন্তু হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে তড়িত-চৌম্বকীয় বর্ণালীর কেবল দৃশ্যমান অঞ্চল ও নিকট অবলোহিত অঞ্চলই দেখা যায়। তাই আমাদের এমন একটা টেলিস্কোপ প্রয়োজন যা দিয়ে অবলোহিত অঞ্চলের আলো স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়েই তৈরী করা হয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।

      ২. এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ: আমাদের সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহগুলো তথা এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর বায়ুমণ্ডল তার নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে আসা কিছু আলো শোষণ করে নেয়। ফলে ওই এক্সোপ্ল্যানেটের শোষণ বর্ণালি বিশ্লেষণ করলে ওই বায়ুমণ্ডলে কী কী পদার্থ আছে জানা যায়। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে এমনই একটি অতি সংবেদনশীল স্পেকট্রোগ্রাফ রাখা হয়েছে যা দিয়ে এই শোষণ বর্ণালি খুব সহজে ও অতি সূক্ষ্মতার সাহায্যে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। এতে ব্যবহার করা স্পেকট্রোগ্রাফের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি দিয়ে একই সাথে ১০০টি জ্যোতিষ্কের বর্ণালী বিশ্লেষণ করা সম্ভব। কোন কোন এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডলে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ আছে তাও খোঁজার কাজ করবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। উল্লেখ্য, এর আগে কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে এক্সোপ্ল্যানেট খোঁজার খুব দুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হয়েছে।

      ৩. গ্যালাক্সি ও ডার্ক ম্যাটার: যেহেতু ওয়েব টেলিস্কোপ অনেক দূরের বস্তুকে দেখতে পায়, তাই এটি অতীতকেও দেখতে পায়। অর্থাৎ ওই বস্তুগুলোকে তাদের অতীতের অবস্থায় দেখতে পায়। সেহেতু এটির সাহায্যে গ্যালাক্সি ও নক্ষত্র গঠিত হতে দেখা যাবে। সেখান থেকে আমাদের গ্যালাক্সি কীভাবে তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলগুলোকে অবলোহিত অঞ্চলে দেখবে এ টেলিস্কোপ। একই সাথে গ্যালাক্সির মধ্যে থাকা ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব প্রমাণেও কাজ করবে এ টেলিস্কোপ।

      তথ্যসূত্র
      [১] Early Universe
      [২] James Webb Space Telescope Launch Delayed to Christmas Eve or Later
      [৩] The observatory

      Comments

      2023-11-05

      cover-image

      প্রকৃতির শৈল্পিকতা: নীহারিকা

      Astronomy

      প্রকৃতি কখনো আমাদের তার রূপে বিস্মিত করতে ব্যর্থ হয় না৷ প্রকৃতিতে তেমনই একটি সৃষ্টি হল নীহারিকা (Nebulae). তো আজকের ‘Basics of Astrophysics’ সিরিজের লেখায় আমরা নীহারিকার রূপ-গুণ-ধরন নিয়ে কিছুটা খোঁজখবর নেব।

      নীহারিকাকে মূলত মহাজাগতিক মেঘ বলা যায়, যাতে ৯০% হাইড্রোজেন, ১০% হিলিয়াম আর সামান্য পরিমাণে অন্যান্য ভারী মৌল থাকে৷ ভূতুড়ে দেখতে এই গ্যাসের তৈরি মেঘগুলো বেশ উজ্জ্বল-রঙ্গীন থেকে একেবারে অন্ধকারাচ্ছন্নও হতে পারে৷ নীহারিকাগুলো মহাবিশ্বের বিবর্তনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেহেতু এরা গ্রহ-নক্ষত্র তৈরির প্রাথমিক উপাদানগুলো ধারণ করে। রাতের আকাশে আলাদা আলাদা স্থান জুড়ে অথবা অন্য উজ্জ্বল বস্তুর সামনে ছায়ার মত এদের দেখতে পাওয়া যায়৷

      পর্যবেক্ষণীয় ইতিহাস:

      বিশাল নীহারিকাগুলোর পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছিল হাজার হাজার বছর আগে৷ দ্বিতীয় শতাব্দীতে টলেমি পাঁচটি নেবুলাস তারার* কথা বলেছিলেন৷ তারও ৮০০ বছর পর Abn Al-Rahman Suri ছোট একটা মেঘের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বর্তমানে সেখানে আমরা অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে দেখতে পাই৷ ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম টেলিস্কোপ দিয়ে নীহারিকা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন নিকোলাস ক্লড ফাব্রি ডি পেইরেস্ক, ওরিয়ন নীহারিকা শনাক্ত করার মধ্য দিয়ে৷ পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দীতে বহু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দ্বারা একের পর এক নতুন নীহারিকা শনাক্ত হলেও ১৯২০ সালে এডউইন হাবল নীহারিকার বাস্তব প্রকৃতি উন্মোচন করেন৷

      নীহারিকার শ্রেণীবিন্যাস :

      নীহারিকাদের সাধারণত গ্যালাক্টিক ও এক্সট্রা-গ্যালাক্টিক এই দুইভাগে ভাগ করা হয়৷ এখনো পর্যন্ত এক্সট্রা-গ্যালাক্টিক নীহারিকা সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় নি । তবে গ্যালাক্টিক নীহারিকাগুলোকে আবার ডিফিউজড এবং রেগুলার নীহারিকায় বিভক্ত করা হয়েছে৷




      ডিফিউজ নীহারিকা :

      এই প্রকৃতির নীহারিকাগুলোর কোনো নির্দিষ্ট আকার নেই৷ এদেরকে লুমিনাস এবং ডার্ক এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়৷ লুমিনাস নীহারিকাগুলো উজ্জ্বল এবং সহজেই এদের দেখতে পাওয়া যায়৷ এরা বিক্ষিপ্ত ও অনির্দিষ্ট আকারের৷ এদেরকে গ্যালাক্সিগুলোর সর্পিল বাহুগুলোতে দেখা যায়৷

      রিফ্লেকশন নীহারিকা :

      রিফ্লেকশন নীহারিকা পাশে থাকা তারা বা জ্বলন্ত নীহারিকা (emission nebula)-র আলোয় আলোকিত হয়৷ যে বি টাইপ তারাগুলো অত্যন্ত উজ্জ্বল কিন্তু তাপমাত্রা ২৫হাজার কেলভিনের কম, সেগুলো নীহারিকার গ্যাসকে আয়নিত করতে পারে না। কিন্তু নীহারিকারা সে আলো ছড়িয়ে আলোকিত হতে পারে৷

      উদাহরণ: উইচ হেড নীহারিকা৷




      ইমিশন নীহারিকা :

      গ্যালাক্টিক তলের কাছাকাছি বি১ দশার পূর্বের তারার সাথে ইমিশন নীহারিকার দেখা মিলে৷ অত্যন্ত গরম এই তারাগুলো শক্তিশালী অতিবেগুনী রশ্মি নির্গমন করে ইমিশন নীহারিকার গ্যাসকে আয়নিত করে রাখে যেটা ফ্লুরোসেন্স ইফেক্ট তৈরি করে। ফলে এই নীহারিকাগুলো থেকে আলো নির্গত হয়।

      ইমিশন নীহারিকাগুলো আবার দুই ধরনের।

      H II রিজিওন :

      H II রিজিওন হলো কম ঘনত্বের আংশিকভাবে আয়নিত গ্যাসের বিরাট একটা মেঘ যেখানে সম্প্রতি তারার জন্ম নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ নীলতারাগুলো স্বল্পজীবনকালে আশেপাশের গ্যাসগুলোকে আয়নিত করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ অতিবেগুনী রশ্মি নির্গত করে৷ এজন্য এদের নামের সাথে নীহারিকাগুলোতে থাকা বিপুল পরিমাণের আয়নিত হাইড্রোজেনের নামের মিল আছে৷ H II রিজিওন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে হাজার হাজার তারার জন্ম দিতে পারে৷ শেষের দিকে, সৃষ্টি হওয়া তারকাগুচ্ছে সুপারনোভা বিস্ফোরণ এবং দৈত্যাকার তারা থেকে উৎপন্ন সৌরঝড় H II রিজিওনের অবশিষ্ট গ্যাসগুলোকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়৷ ওই স্থানে রয়ে যায় জন্ম নেওয়া অসংখ্য তারারা৷

      উদাহরণ: হার্ট এবং ঈগল নীহারিকা৷




      সুপারনোভা র‍্যামনেন্টস :

      ‘সাদা বামন তারা’ নামক নিবন্ধটিতে বলা হয়েছিল, বৃহৎ তারাগুলো জীবনের শেষপর্যায়ে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এতে তারার বাইরের স্তরটি বিস্ফোরিত হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে৷ এসব ছড়িয়ে পড়া অংশগুলোকে নিয়ে যে নীহারিকা তৈরি হয় তাকে সুপারনোভা র‍্যামনেন্টস বলে৷ এই গ্যাসীয় নীহারিকাগুলো সুপারনোভাতে ছড়িয়ে পড়া অংশ এবং সেই পথে থাকা মহাকাশীয় পদার্থ ও বিকিরণ (Interstellar Medium (ISM)) নিয়ে গঠিত৷

      যদিও খালি চোখে দৃশ্যমান না, তবুও সুপারনোভা র‍্যামনেন্টস মহাকাশীয় পদার্থ ও বিকিরণের(ISM) সংস্পর্শে আসায় শক্তিশালি এক্স-রে ও রেডিও তরঙ্গ বিকিরণ করে৷ সুপারনোভার বিস্ফোরিত ভারীপদার্থগুলো মহাকাশীয় পদার্থ ও বিকিরণের সাথে মিশে যায় যা পরবর্তী প্রজন্মের তারার জন্ম দেওয়ার সময় ব্যবহৃত হয়৷

      উদাহরণ : ক্র‍্যাব-নীহারিকা, টরাস৷




      ডার্ক নেবুলা/ অন্ধকার নীহারিকা :

      এই নীহারিকাগুলো বেশ ঘন হওয়ায় এদের পিছনের দৃশ্যমান আলো রুখে দেয়৷ কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জমাট বাঁধা নাইট্রোজেনে আচ্ছাদিত অতি ক্ষুদ্র কণাগুলোর জন্য মেঘগুলো পেরিয়ে কোনো আলো সামনে আসতে পারে না। ফলে এদের রঙ কালো, অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়৷ এদের গড় ঘনত্ব প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে ১০০-৩০০ মলিকিউল এবং অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৭ থেকে ১৫ কেলভিন৷ মেঘের অভ্যন্তরের উপাদান অণু থেকে মাইক্রোওয়েভ রশ্মি ছাড়া কোনো কিছুই শনাক্ত করা যায় না৷ উদাহরণ : হর্স-হেড নীহারিকা।


      প্ল্যানেটারি নীহারিকা :

      প্ল্যানেটারি নীহারিকাগুলো ইমিশন নীহারিকাদের মতো অনিয়মিত আকৃতির পরিবর্তে নিয়মিত আকৃতির হয়৷ এদের মধ্যভাগ খুবই উত্তপ্ত নীল তারার মত কেন্দ্রীভূত থাকে৷ আকৃতি অনেকটা তারার বাইরের দিকে বিস্তৃত বলয়ের মত।

      গ্রহের মতো গোলাকার হওয়ায় এদের প্ল্যানেটারি নীহারিকা বলা হয়। যদিও এদের সাথে গ্রহের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নাই৷ যখন বৃহদাকার বায়ুমণ্ডল ক্ষয়ে আসে, উত্তপ্ত ও আলোকিত কেন্দ্র থেকে অতিবেগুনী রশ্মি নির্গত পদার্থকে আয়নিত করে৷ শোষিত বিকিরণ তারার চারদিকের গ্যাসের স্তরকে আলোকিত করে৷ তৈরি হয় উজ্জ্বল নীহারিকা৷ উদাহরণ : এস্কিমো নীহারিকা৷




      - অনুবাদক : সৌরভ মনি বিশ্বাস


      Comments

      2023-11-05

      cover-image

      শতাব্দীর দীর্ঘস্থায়ী চন্দ্রগ্রহণ

      Astronomy

      আগামী ১৯ নভেম্বর ঘটতে চলেছে শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চন্দ্রগ্রহণ। সূর্য ও চাঁদের মাঝে পৃথিবী চলে আসার ফলে চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। ১৯ নভেম্বরের চন্দ্রগ্রহণে চাঁদের ৯৭ শতাংশ এলাকা পৃথিবীর ছায়া দ্বারা ঢেকে যাবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের উপস্থিতির কারণে চাঁদের পৃষ্ঠ ওই সময় লাল দেখাবে। নাসার হিসাব মতে এই চন্দ্রগ্রহণটি ৩ ঘন্টা, ২৮ মিনিট, ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে যা ২০০১ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই একে শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চন্দ্রগ্রহণ বলা হচ্ছে।

      একই সময়ে পৃথিবীর সকল স্থান থেকে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখা সম্ভব নয়। এবারের চন্দ্রগ্রহণটি উত্তর আমেরিকা থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যাবে। আমেরিকা, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে মূলত গ্রহণ দেখা যাবে। অন্যান্য জায়গা থেকে গ্রহণ আংশিক দেখা যাবে কিংবা দেখা যাবে না।

      তবে যারা এই চন্দ্রগ্রহণটি দেখতে সক্ষম হবে না, তাদের জন্যও রয়েছে নাসার সু-সংবাদ। নাসার হিসাবমতে, সামনের আট দশকে আরো ১৭৯টি চন্দ্রগ্রহণ দেখতে সক্ষম হবে পৃথিবীবাসী। গাণিতিক হিসাব কষে দেখা গিয়েছে, পরবর্তী চন্দ্রগ্রহণটি হবে মে ১৬, ২০২২ তারিখে। যারা বাইরে গিয়ে চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পারছেন না, তাদের জন্যও রয়েছে লাইভ স্ট্রিমিং-এ চন্দ্রগ্রহণ দেখার সুযোগ।*

      https://www.timeanddate.com/live/eclipse-lunar-2021-november-19




      আমাদের সিলেট থেকে সন্ধ্যা ৫টা ৪ মিনিট থেকে ৬টা ৩ মিনিট পর্যন্ত আমরা দেখতে পাব, পেনাম্রাল চন্দ্রগ্রহণ। এবং সর্বোচ্চ গ্রহণ দেখা যাবে ৫টা ৭ মিনিটে তখন চাঁদের Magnitude হবে -0.281. যেখানে পূর্ণ চাঁদের Magnitude হয় -12.5.

      Resources:

      1. NASA
      2. TimeandDate

      Comments

      2023-11-05